Blog

Post Thumbnail

বুক রিভিউঃ আরণ্যক

December 26, 2024 by Shahriar Ahmed Shovon

বই পড়তে পড়তে যতই আপনার মনে হবে লেখক অসাধারণ এক ভ্রমণ বৃত্তান্ত রচনা করেছেন ঠিক ততবার বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এসে আপনাকে জানাবে, “ইহা ভ্রমণ বৃত্তান্ত বা ডায়েরী নহে -উপন্যাস”। আমিও তাই লেখকের সুরে সুর মিলিয়ে একে উপন্যাসই বলবো। উপন্যাসের মূলত চরিত্র অরণ্য, বন। লেখক পুরো উপন্যাসের মাধ্যমে আপনাকে কখন যে এক গভীর অরণ্যের মধ্যে নিয়ে এসে ফেলবেন তা আপনি একটুও আঁচ করতে পারবেন না। আচ্ছা চলুন ভেঙে বলি পুরো বিষয়টা।

লেখক বেকার এবং অর্থনৈতিক ভাবে খুব খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। শুরুর মেসের টাকা ফাঁকি দিয়ে লুকিয়ে রাস্তায় নেমে আসার বর্ণনা পড়ার সময় আপনার কাছে আবহটা দস্তয়েভস্কির ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট-এর মতো মনে হবে। তবে দস্তয়েভস্কি যখন আপনাকে সমাজের বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে স্নায়বিক রোলার কোস্টারে ঘোরাবে তখন বিভূতিভূষণ আপনাকে ঘোরাবে বনের মধ্যে, ঘোড়ায় চড়িয়ে। আপনি পাহাড়ি ঝর্ণার বয়ে যাওয়া নদীর পাশে বসে দূরে তাকিয়ে দেখবেন নীলগাই আর হরিণের ক্লান্ত হেঁটেচলা। অবশ্য লেখক তার কর্তব্যজ্ঞানে আপনাকে প্রায়শই মনে করিয়ে দেবে বনের কোথায় বাঘের ভয় আর কোথায় রাতে একা চলাচল ঠিক হবেনা। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের দুঃখ-কষ্টের বর্ননাও লেখক তুলে এনেছেন খুব সন্তর্পনে।

জ্যোৎস্না রাত, সামনে বিস্তীর্ন বন, চারিদিকে ভয়ংকর নিশ্চুপ পরিবেশ। জ্যোৎস্নায় চোখ সয়ে যাওয়াতে আপনি আশেপাশের অনেক কিছুই দেখতে পারছেন। রাতের নরম আলোয় পরিবেশের মধ্যে একরকম মাতালতা বিরাজ করছে। এরকম স্থানে আপনি ঘোড়ায় চড়ে চলেছেন। শহুরে পরিবেশের দম ধরে থাকা আবহাওয়ার মাঝে এরকম বর্ণনা কল্পনাতে আসলেও মন শীতল হয়ে যেতে বাধ্য। লেখক যেন সেই গুরুদায়িত্বই নিয়েছেন।

মুল গল্পে কাহিনী বা প্লট যদি বলেন সেখানে আপনাকে ধাক্কা দেয়ার মতো কোনো উপাদান রাখার চেষ্টা লেখক করেননি। খুব সহজ আর সরল পথে বয়ে চলা গল্পে মাঝে মাঝে যাত্রাবিরতি নিয়ে লেখক সামাজিক ছোটখাটো বিভিন্ন বিষয় তুলে এনেছেন। গল্পে সেগুলো বেখাপ্পা তো লাগেইনি বরং মনে হয়েছে খুব প্রয়োজনীয়।

কোনো কিছু নিয়ে খুব বিচলিত, মানসিক ভাবে দৌড়ের উপর আছেন? খুব ভালো হয় এমন সময় যদি মানসিক প্রশান্তির জন্য একটু নদীর পাড় থেকে ঘুরে আসেন। সে উপায় নেই? তাহলে আশেপাশে নিরিবিলি কোথাও, যেখানে মানুষের কোলাহল নেই? সেটাও হচ্ছেনা? তাহলে যদি একদম উপায় নাই থাকে আমি বলব এই উপন্যাসখানা নিয়ে বসে পড়ুন। ভালো সম্ভাবনা আছে আপনি কল্পনাতে যে নতুন দিগন্তের সৃষ্টি করবেন তা কোনো অংশেই বাস্তব দুনিয়ার থেকে কম না। এমনকি বই যখন একদম শেষের দিকে তখন আমি অনেক looseleft অনুভ করছিলাম, সাধারণত এরকম খুব কম বইয়ের ক্ষেত্রেই হয়। বিভূতিভূষণের আরণ্যক আপনাকে অরণ্যের অপ্রতিম সৌন্দর্যে আচ্ছাদিত করে রাখুক; এই দোয়া রেখে শেষ করছি।

বইয়ের নামঃ আরণ্যক
লেখকঃ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

( বিশেষ উল্লেখঃ বইটি পড়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে উৎসবের জোরাজুরি। ছেলেটা বেশ কয়েকবার বলেছে পড়তে। এখন পড়া শেষ, একটা ধন্যবাদ ওকে দেয়া দরকার। যাই দিয়ে আসি। )