Blog

Post Thumbnail

বুক রিভিউঃ The Courage To Be Disliked

December 29, 2024 by Shahriar Ahmed Shovon

নাম দেখে যে কেউ কনফিউজ হতে পারে ভেবে যে, “Yet another self-help book.” কিন্তু আমি আশ্বস্ত করছি মোটেও সেরকম না। বরং পুরো বইটা প্লেটোর রিপাবলিক স্টাইলে লেখা। অর্থাৎ ডায়ালগ আকারে। এখানে একজন যুবক তার জীবন নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে যায় একজন ফিলসফারের কাছে। এই দুইজনের ডায়লগটাই পুরো বই। এখানে ফিলসফার তার ফিলসফি হিসেবে আলফ্রেড অ্যাডলারের থিওরিকে ধারণ করেছে। এবং অ্যাডলারের যে ওয়ার্ল্ড ভিউ সেটা দিয়ে যুবকের সঙ্গে ডিস্কাশন চালিয়ে গেছে। জাপানিজ লেখক Fumitake Koga পুরো বইটা লিখেছেন Ichiro Kishimi’র মাধ্যমে তিনি আলফ্রেড অ্যাডলারকে যেভাবে বুঝেছেন সেটার আলোকে। বইয়ের ভেতরে আসা যাক,

সাধারণত ফ্রয়েডিয় তত্ত্বের আলোকে যে ব্যাখ্যা আমরা করি তা অনেকটা কজ-ইফেক্ট ধারণার। অর্থাৎ এরকম, যেহেতু আমার মন খারাপ ছিল তাই আমি পড়তে বসিনি। ফ্রয়েডিয় তত্ব এখানে বলবে যেহেতু মন খারাপ ছিল একটা কজ এন্ড তার ইফেক্ট হচ্ছে পড়তে না বসা। কিন্তু অ্যাডলারের ফিলসফি বলে উল্টো কথা। যেহেতু আমি পড়তে বসতে চাইনি ( বা সাহস করিনি ) সেহেতু আমি মন খারাপের ফিল/কজ তৈরি করেছি।

শুনতে বেশ অ্যাব্জার্ড লাগতে পারে, আমারো লেগেছে। এবং শুধু এখানেই না বহু পয়েন্টে আপনার নিত্যদিনের ধ্যানধারণার সঙ্গে অ্যাডলারের তত্ব মিলবে না।

অ্যাডলার হ্যাপিনেসকে ডিফাইন করে, কমিউনিটি কন্ট্রিবিউশন দিয়ে। কমিউনিটি বলতে সমগ্র সৃষ্টিজগতকে সে কমিউনিটি হিসেবে ধরে, হ্যাপিনেসকে বলছে এই কমিউনিটিতে কন্ট্রিবিউশনের হিসাব। অর্থাৎ আপনি যে “অন্যের কাজে আসেন” বা “অন্যের জন্য আপনি দরকারি” এই যে অনুভব সেটাই হ্যাপিনেস। এখানে কন্ট্রিবিউশন নানাভাবে হতে পারে, সিম্পলি আপনার নিজের কাজ করার মাধ্যমে যেমন কন্ট্রিবিউশন হতে পারে তেমনি এর বাইরে গিয়ে এক্সট্রা করা কাজও কন্ট্রিবিউশন হতে পারে। সব ক্ষেত্রেই সেটা হ্যাপিনেস। আবার কেউ যদি “অ্যাক্ট” না করতে পারে, অর্থাৎ কমিউনিটিতে কোনো কন্ট্রিবিউট না রাখতে পারে তবুও সে হ্যাপি থাকতে পারে কারণ যাস্ট এক্সিস্ট করাকেও অ্যাডলার বলছে কন্ট্রিবিউট করা।

যেমন ধরুন আপনি বা আপনার বাব-মা সরাসরি কাজ করছে, সেটা হতে পারে জব, লেখাপড়া, রান্না-ফ্যামিলির ম্যানেজমেন্ট যা খুশি। সবকিছুই “অ্যাক্টের” মাধ্যমে কন্ট্রিবিউট করা। এইযে ফিলিং যে আপনি লেখাপড়া করার মাধ্যমে কন্ট্রিবিউট করছেন, সেটাই হ্যাপিনেস। তবে এমন অনেকেই তো আছে যারা “অ্যাক্ট” করে কন্ট্রিবিউট করতে পারছেনা। যেমন আপনার মুমূর্ষু বৃদ্ধ বা ছোট্ট শিশু। মূলত তাদের হ্যাপিনেসটা আসছে তারা এক্সিস্ট করা থেকেই। যেহেতু আগেই বলেছি এখানে এক্সিস্ট করাও কন্ট্রিবিউট করা। কন্ট্রিবিউশন কিভাবে? আপনি অপজিট টা দেখেন, কোনো বৃদ্ধ বা ছোট্ট শিশু আপনি কি চান যে যেহেতু তার কন্ট্রিবিউশন নাই তাই সে এক্সিস্ট না করুক? চান না কিন্তু, আপনি চান আপনার বৃদ্ধ বাবা মা বা ছোট ভাই বোন বা সন্তান অ্যাক্ট করুক না করুক এক্সিস্ট করুক। আপনার মানসিক স্ট্যাবিলি ঠিক থাকছে। আপনাকে মেন্টাল সাপোর্ট দেয়ায় তাদের কন্ট্রিবিউশন যাস্ট বিয়িং এক্সিস্ট।

এরকম বহু ভিন্ন ভিন্ন মতামত নিয়ে অ্যাডলার হাজির হয়েছে। এবং বইতে তা ডায়লগের স্টাইলে খুব সহজ করে তুলে ধরা উইথ এনাফ এক্সাম্পল। এছাড়া টিপিক্যালি যেধরনের প্রশ্ন আপনার মনে হাতে পারে বই পড়ার সময় সেগুলো আবার বইয়ের অন্য ক্যারেক্টার, যুবকের প্রশ্নের মাধ্যেম রিপ্রেজেন্ট হয়েছে।

অ্যাডলারের ফিলসফির আমার সবচেয়ে প্রিয় কনসেপ্ট হচ্ছে জীবনের ধারণা। অ্যাডলার বলছে জীবনের কোনো মানে নাই। এখানে পাস্ট হচ্ছে কন্সট্যান্ট এন্ড ফিউচার ব্ল্যাংক। যেহেতু দুটোর একটাতেও আমার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই তাই আমরা শুধু বর্তমান কে নিয়ে থাকবো। শুধুমাত্র প্রেজেন্ট মুহূর্তে বিচরণ করবো। এন্ড জীবন মোটেও কোনো ডেস্টিনেশনের দিকে ধাবিত হওয়া না। জীবন একটা জার্নি, একটা ডান্স। যার প্রতিটা মুহূর্ত আপনার কাছে সমান গুরুত্বপুর্ণ।

একটা পাহাড়ের চুড়ায় ওঠা এখানে জীবনের মানে না। জীবনের মানে হচ্ছে পাহাড় চড়াটা। হতেই পারে আপনি উঠতে পারলেন বা পারলেন না, জীবনের মানে কখনোই নাই হয়ে যায়না। আপনিও কখনো ব্যর্থ হয়ে যান না। কারণ প্রথম থেকেই চুড়ায় ওঠা তো আপনার ডেস্টিনেশন ছিলনা। আপনার ডেস্টিনেশন ছিল পাহাড়টা চড়া। আপনি চড়েছেন।

অ্যাডলার বলছেন জীবনকে একটা কজ-ইফেক্টের স্টোরিলাইন চিন্তা করা ভুল। জীবন মূলত অনেকগুলো ডটের একটা সমষ্টি। আমাদের শুধুমাত্র বর্তমান নামক ডটটা নিয়েই কন্সার্ন থাকতে হবে। লাইক অ্যা ডান্স, নাচের সময় কেউ নাচের পরে কোন স্টেপ এইগুলো নিয়ে ভাবেনা। বা নাচের সময় পারিপার্শ্বিক দিকে কেউ দেখেনা। শুধুমাত্র নাচের কারেন্ট স্টেপ নিয়ে সে চিন্তিত। জীবনের মানেও সেরকম, বর্তমানে ডুবে থাকা।

এরকম আরো অনেক অনেক বিষয় নিয়ে ফিলোসফিক্যাল ডিস্কাশনের এই বই, “The Courage To Be Disliked.” এমন কোনো কথা নেই পড়লে আপনাকে সব কনসেপ্ট মেনে নিতে হবে। আপনার হাতে ফ্রিডম আছে চুজ করার বা না করার। বাট ডেফিনেটলি বইটা খুব ভালো করে লেখা। পড়তে গিয়ে কখনো বোর লাগবেনা। বেশ অনেক কথা রিপিটিটীভ মনে হলেও পরে দেখলাম দরকার আছে। কন্সেপ্টগুলো কানেক্টেড এন্ড ভালো করে বোঝাতে গেলে তা দরকার ছিল।

আমি জানিনা আপনারা ইন্টারেস্টেড হবেন কিনা, ব্যক্তিগতভাবে আমি ফিলসফিতে খুব আগ্রহী। এজন্য হয়তো আমার কাছে ভালো লেগেছে। কেউ পড়লে জানায়েন কেমন লাগলো, উড রিয়েলি লাভ টু হ্যাভ এ ডিস্কাশন।