বুক রিভিউঃ আমারে দেব না ভুলিতে
December 17, 2024 by Shahriar Ahmed Shovon
এই বইমেলা-২০২৪ থেকে এখন অব্ধি সংগ্রহ করা বইগুলো পড়ে রিভিউ লেখার যে ইচ্ছা সেটার প্রথম রিভিউ আজকে
১৮৯৯ থেকে ১৯৭৬ সালের বিশাল ৭৭ বছরের টাইমলাইন। এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ পেয়েছেন নোবেল, আবার মারাও গেছেন। জীবনানন্দ দাশের কবিতাকে কেউ ভালো বলেছেন আবার কেউ কেউ বলেছেন সেগুলো কবিতার ধাঁচেই পড়েনা। খোদ রবীন্দ্রনাথ বলেছে এই কথা। শেষে বেচারা ট্রামে কাটা পড়ে অকালে মৃত্যুবরণ করেছেন। জসীমউদ্দিন পত্রিকার অফিসে অফিসে ঘুরে শুনেছেন কবিতায় আঞ্চলিক ভাষায় ব্যবহারের নিন্দা। পিসি সরকারের ক্লাস ৬ থেকে জাদু দেখানোর ঘটনাও স্থান পেয়েছে এই বিশাল টাইমলাইনে। আছেন শরৎচন্দ্র, বিভূতিভূষণ থেকে শুরু করে গায়ক দিলিপকুমার রায়। উঠে এসেছে এরকম আরো বহু মানুষের কথা।
তবে বছরের শুরু, শেষ আর পার্থক্যটা খেয়াল করলে দেখবেন বিশেষ কাউকে নির্দেশ করছে। বইয়ের প্রচ্ছদেও তার মধ্যবয়সের একটি ছবি আছে। ইয়েস, কাজী নজরুল ইসলাম। এই পুরো টাইমলাইনটা মূলত নজরুলের পুরো জীবন পঞ্জিকা। আর এই পঞ্জিকার একেক সময়ে লেখক দেখিয়েছেন সেই সময়ের রেলেভেন্ট ঘটনা + ব্যক্তিদের।
পুরো বইটিকে আপনি বলতে পারেন কাজী নজরুল ইসলামের জীবনী। কিন্তু সাধারণ অন্যান্য জীবনীতে যেমন হয়, শুধু মূল চরিত্রকে বর্ণনা করা হয় ( খুব স্বাভাবিক ) সেরকম জীবনী এটি নয়। বরং এখানে অন্যান্য সকল চরিত্রকে বেশ ভালোভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
বলতে পারেন ঐ সময়ের সকলের ছোট ছোট জীবনী + নজরুলের পুরো জীবনীর একটা সামগ্রিক চিত্র এই বই। আমি এখনো ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি এটাকে কি উপন্যাস বলব নাকি বলব জীবনী। ইভেন ফিকশন-ননফিকশন কি বললে ভালো হয় সেটাও আমি বুঝে উঠতে পারছিনা। লেখক বলেছেন যেটা খুশি বলতে, আমি তাই ফিকশন ই বলছি। যদিও বই পড়ার পরে আমি বাংলাপিডিয়া থেকে নজরুলের পুরো জীবনী পড়েছি। এছাড়া অন্যান্য চরিত্রদের সম্পর্কেও আমার জানাশোনা যা ছিল তার সঙ্গে অল্প কিছু লেখাপড়া করেছি। সব মিলিয়ে ফিকশন বললে আবার অবিচার হয়ে যায়। কারণ ঘটনার যে ধারা এবং মুল ঘটনার প্রধান যে অংশগুলো তার সবগুলোই পুরো ইতিহাস থেকে তুলে ধরা।
তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে অন্যান্য জীবনী গ্রন্থের মতো পড়তে গেলে ইতিহাস মনে হয়নি, বরং উপন্যাস মনে হয়েছে। এইযে উপন্যাস মনে হওয়া এর পেছনে কারণ হতে পারে লেখক মাঝে মাঝে বেশ কিছু কল্পনার আশ্রয় নিয়েছেন। সেগুলো বইকে পড়তে আরো আনন্দদায়ক করেছে সেটা স্বীকার করব। এটা তিনি বইয়ের ফ্ল্যাপে বলেই রেখেছেন। তবে এই আশ্রয়ে ঘটনা ইতিহাসের সত্যতাই কোনো দাগ ফেলেনি।
সব মিলিয়ে বইটির জনরা নির্ধারণ বেশ কঠিন বলব, এমনকি বইয়ের পেছনে প্রকাশনী থেকে লিখেছে Fictional Biography. সুতরাং বুঝতেই পারছেন কেমন যেন তারাও সংশয়ে।
আচ্ছা, আসল কথায় আসি। আমার পুরো বইটা অনেক ভালো লেগেছে। বইয়ের ঘটনাগুলোর অবতারণ আমি উপভোগ করেছি। আশ্চর্যের বিষয় পুরো বইতে কোথাও বিরক্ত লাগেনি, লেখক খুব যত্ন করে মেদ কমিয়ে লেখাকে স্লিম করেছেন মনে হয়েছে। শুরু থেকে শেষ অবধি লেখকের কিছু বায়াজনেস ছিল মনে হয়েছে, এবং থাকাটা স্বাভাবিক। এই লেখকের কোনো বই আমি আগে পড়িনি। বইমেলায় আদর্শের স্টলে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। ফ্ল্যাপের লেখা পড়ে + লেখক পরিচিতি দেখে বেশ প্রমিসিং মনে হলো। স্টলে থাকা একজন ভদ্রলোক বললেন লেখক ভালো লেখেন, নিয়ে নিন। নিয়ে নিলাম।
সুন্দর একটা সময় + ফিকশনের স্টাইলে কিছুটা নন-ফিকশন পড়তে চাইলে বলব অসাধারণ হবে বইটি।
বইয়ের নামঃ আমারে দেব না ভুলিতে
লেখকঃ আশীফ এন্তাজ রবি
প্রকাশনীঃ আদর্শ
এই রিভিউ প্রথম প্রকাশিতঃ ১৭-ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ( রাত ১২:১২ ), ফেসবুকে।
Categories
Recent Posts
About
This is my personal blog, where I write about various topics related to software development, technology, and my own experiences. I enjoy exploring new technologies, frameworks, and programming languages, and sharing what I learn with others.