Blog

Post Thumbnail

বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী অর্থনীতির রূপান্তর - জিয়া হাসান

August 25, 2024 by Shahriar Ahmed Shovon

গতকাল বাংলা একাডেমিতে আদর্শের একটা আলোচনা অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে জিয়া হাসানের আলোচনা থেকে যা শুনেছি তার সামারিঃ

আওয়ামীলীগের উন্নয়নের যে বয়ান তার শুরু ধরতে পারেন ২০১৪ থেকে। আশ্চর্যজনকভাবে সে বয়ানকে ব্যাক করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ নির্ভরযোগ্য প্রমাণাদিও তারা তৈরি করেছে। অর্থাৎ আপনি আওয়ামীলীগের কাউকে যদি বলেন আওয়ামীলীগের উন্নয়নের বয়ান ভুয়া তবে সম্ভাবনা আছে সেই ব্যক্তি কিছুটা চতুর আর শিক্ষিত হলে আপনাকে নাম্বার, রিসার্চ দিয়ে দেখিয়ে দেবে যে আসলে ভুয়া না। ইভেন আমি নিজেও এই বিষয়ে যথেষ্ট সন্দিহান ছিলাম। বুঝতে পারি হয়তো নাম্বার ইনফ্লেটেড বাট সবগুলো নাম্বারের মধ্যে খুব সুন্দর সামঞ্জস্য ছিল যা ন্যাচারাল হবার কথা। তবে আমার সেই ভুল ধারণা বা বোকামি ভেঙে যায় গতবছর জানুয়ারিতে।

জিয়া হাসানের উন্নয়ন বিভ্রম পড়ে বুঝতে পারি ঠিক কিভাবে নাম্বার ইনফ্লেটেড করা হয়েছিল। আর অর্থনৈতিক ভাবে ঠিক কতটা ডিজাস্টারাস একটা সিচুয়েশনে আমরা আছি। শেখ হাসিনার পতন হওয়ার কথা ছিল অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতার কারণে। প্রবাসীরা যেভাবে রেমিটেন্স পাঠানো অফ করেছিল তাতে হয়তো কয়েকমাস পরে সেটা হয়েও যেত। কিন্তু তার আগেই আল্লাহর রহমতে আমরা স্বৈরাচারীর পতন ঘটাতে সক্ষম হই। বাট অর্থনীতির ভঙ্গুর যে অবস্থা ছিল সেটা এখনো বর্তমান। আর ক্রমশ সেটা খারাপের দিকে যাবে এবং যাচ্ছে সেটাও এক্সপেক্টেড। অর্থাৎ সিচুয়েশন দাঁড়িয়েছে এমন যে আমাদের দেশের অর্থনীতি এখন একদম খাদের কিনারায়। তবে ক্লাসিক অর্থনীতিবিদরা বিশ্বাস করেন এতোটাও খারাপ অবস্থা দেশের না। আলোচনা যেহেতু জিয়া হাসান করেছেন সেহুতু উনার স্ট্যান্ড পয়েন্ট থেকেই বলেছেন যে দেশের অর্থনীতি ভঙ্গুর। তাহলে এখন অর্থনীতির ভবিষ্যৎ কী?

জিয়া হাসান বলছেন আগামী ২-৩ বছরের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে দেশের পলিসি মেকারদের উপরে। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের ক্ষতিটা শুধু আবু সাঈদের রক্তে শোধ হয়ে গেছে সেটা ভাবা ভুল। ক্ষতির আসল বা মূলধন হয়তো রক্তে শোধ হয়েছে কিন্তু সুদটা এখনো বাকি। সেটা শোধ হবে অর্থনীতি দিয়ে। আর দুঃখজনক হলেও সত্যি এইটার কোনো স্কেপ নাই। অর্থাৎ ক্ষতিটা আমাদের ক্যারি করাই লাগবে। তবে সেটা কিভাবে আমরা হ্যান্ডেল করবো তার উপরে ক্ষতির কম বেশিটা নির্ভর করছে। জিয়া হাসানের সল্যুশন তাহলে কী?

আমাদের সামনে মূল সমস্যার সমাধানের উপায় প্রধানত দুইটা। প্রথমটা আপনি টাকা ছাপায়ে দেশের মধ্যে অর্থনীতি সচল রাখতে পারেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে আপনাকে ইনফ্লেশনের চাপ সহ্য করতে হবে বহু বছর ধরে। আর দ্বিতীয়টা হচ্ছে সরকারের সাইজ কমিয়ে, অভ্যন্তরীণ খরচ কমিয়ে, আমদানি কমিয়ে লাইফস্টাইলে আমূল পরিবর্তন আনা। অন্তত আগামী ২ বছর এবং একটা টাকাও না ছাপিয়ে।

এখন প্রথম চয়েস যদি আপনি গ্রহণ করেন আপাত দৃষ্টিতে জনগণ খুব খুশি হবে। কারণ সে দেখবে তার জীবনে অর্থনীতির খারাপ প্রভাব পড়ছেনা। সরকারের উপর মানুষ সন্তুষ্টও থাকবে। কিন্তু ধীরে ধীরে জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয় খরচ এতো বাড়তে থাকবে একটা সময় দেশ আর কনট্রোল করতে পারবেনা এবং পুরোটা হাতের বাইরে চলে যাবে। দেখা যাবে দেশের মধ্যে ইনফ্লেশন এতো বেড়ে গেছে নিম্ন আয়ের মানুষ লিটেরিলি না খেয়ে মারা যাবে। মধ্যবিত্ত হয়তো কোনোভাবে বেঁচে থাকতে পারবে। কিন্তু দেশের গ্রোথ সত্যি বলতে দীর্ঘ একটা সময়ের জন্য থমকে যাবে।

দ্বিতীয় চয়েস যদি গ্রহণ করা হয় তবে আগামী ২-৩ বছর আমাদের লাইফস্টাইলে ব্যপক পরিবর্তন আনতে হবে। বিলাসী দ্রব্য, দেশের বাইরে ঘোরাঘুরি, অপ্রয়োজনীয় ইম্পোর্ট, সরকারের ব্যয় এসবকিছুতে অনেক অনেক সেক্রিফাইস করা লাগবে। এর বাইরে আপনাকে প্রশাসনে অনেক অনেক কাটছাঁট করতে হবে। দেশের বিভিন্ন জায়গার অরাজকতা বা চাঁদাবাজি, সিণ্ডিকেট বন্ধ করার মাধ্যমে ছোট ব্যবসাকে মাঝারি এবং মাঝারি ব্যবসাকে বড় হবার পর্যাপ্ত ব্রিদিং স্পেস দিতে হবে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারের চুক্তি রিডিফাইন করতে হবে। জিয়া হাসানের মতে তারা যদি চুক্তির ভায়োলেশনের জন্য আদালতে যায় তবুও সরকার আইনিভাবে জিততে পারবে। বিস্তারিত ব্যাখ্যার সুযোগ এখানে নেই।

এছাড়া সরকারের বাৎসরিক যে ব্যয় তা কমিয়ে সামগ্রিক আয় থেকে বেশি সর্বোচ্চ ৫০% রাখতে হবে। যেটা ২০১৪ এর পরে বেড়ে ৭০% অবধি হয়েছিল। দেশের বেশিরভাগ ইনফাস্ট্রাকচারাল গ্রোথ থামিয়ে দিতে হবে। সো কল্ড উন্নয়নের মহাসড়ক থেকে হয়তো বাংলাদেশ ফুটপথে নেমে আসবে। তবে যদি ঠিকভাবে খরচ কমানো যায় দেখা যাবে ২-৩ বছর পরে আমাদের ইনফ্লেশন কমে টাকার মান যথেষ্ট বেড়ে গেছে। সামগ্রিক ঋণের পরিমাণ কমবে। এবং রিজার্ভে ডলার বেড়ে যাবে। এসবকিছুর ফলাফল হিসেবে আমরা এই পিরিয়ড পরে আবার একটা অল্মোস্ট স্বাভাবিক ব্যয়ে ফিরে যেতে পারবো।

জিয়া হাসানের রেকোমেন্ডেড ওয়ে স্বাভাবিকভাবেই দ্বিতীয়টা। তবে জিয়া হাসান একটা ফ্রেমওয়ার্ক দিয়েছেন। সরকারকে মিনিমাল খরচে এনে + একটা টাকাও না ছাপিয়ে দেশের অর্থনীতি সচল রাখা। বিস্তারিত সল্যুশনে আগানোর জন্য অর্থনীতিবিদের সঙ্গে বসে পলিসি মেকারদের আলোচনা করা প্রয়োজন ঠিক কোনভাবে এগিয়ে গেলে সামগ্রিকভাবে লংটার্মে দেশ লাভবান হবে। সাময়িক জনগণের আত্মতুষ্টির চেয়ে দূরে তাকিয়ে চিন্তা করাই ভালো।


আমি অর্থনীতি সম্বন্ধে কিচ্ছু জানিনা। চেষ্টা করছি লেখাপড়া করার। সেই অবস্থান থেকেই মূলত আলোচনা শুনতে যাওয়া। দুঃখিত কিছু ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে ইচ্ছা স্বত্বেও আমি কোনো নোট নিতে পারিনি। পুরোটাই আমার মেমোরি থেকে লেখা। হতেই পারে বেশ অনেক পয়েন্ট আমি মিস করে গেছি। এবং একই সাথে আলোচনার অনেক অংশ আমি আমার ভাষায় বলেছি। সুতরাং হতে পারে এমন যে জিয়া হাসান বুঝিয়েছেন এক কিন্তু আমি বুঝেছি ভিন্ন আরেক। তাই এই লেখা থেকে আলোচনাকে বিচার করার সুযোগ নেই।

ছবিঃ আদর্শের সৌজন্যে।